পূর্বসূরীদের সম্পর্কে অজ্ঞতা, একটি জাতির অধঃপতনের অন্যতম কারণ । পূর্বসূরীদের বীরত্বগাথা জীবনী, উত্তরসূরিদের উজ্জীবিত করে। বাতিলের মোকাবেলা করার শক্তি জোগায় । নিজেকে আরও কর্মতৎপর করে তুলে।
হকপন্থী দল হিসেবে আমরা আমাদের আকাবিরদের সম্পর্কে কতটুকু জানি। ভারতবর্ষে হক্ব প্রতিষ্ঠায়, আকাবিরগণের সংগ্রামী জীবন সম্পর্কে না জানায়, সংকীর্ণমনা হয়ে থাকতে হয় পদে পদে। অথচ আমাদের আকাবিরদের রয়েছে এক সংগ্রামী ইতিহাস। বাতিলের মোকাবিলায় যারা ছিলেন আপোসহীন। ব্যক্তিজীবন হতে শুরু করে, সামাজিক, রাজনৈতিক এমনকি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের পথিকৃৎ ছিলেন তাঁরা।
এমনই এক মহান আকাবীর ছিলেন আমাদের। যিনি “মুফাসসিরে মুরাদাবাদ” নামে খ্যাত। সদরুল আফাজিল আল্লামা সৈয়দ নইমুদ্দিন মুরাদাবাদী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি )।
তাঁর অনবদ্য তাফসীর “নইমুল বায়ান ফি তাফসীরিল কুরআন” ও “খাজাইনুল ইরফান ফি তাফসীরিল কুরআন” এর পাশাপাশি বিষয়ভিত্তিক প্রায় ৪০ টির মত কিতাব রয়েছে।
“আল বালাগ”, “আল হিলাল” এবং নিজ প্রতিষ্ঠিত “সাওয়াদ আল আ’জম” মাসিক পত্রিকার মাধ্যমে তিনি তৎকালীন উগ্রপন্থী হিন্দুদের ছুড়ে দেওয়া বিভিন্ন আপত্তির জবাব দেন। পাশাপাশি ইসলামপন্থী বিভিন্ন বাতিল ফিরকাদের অপতৎপরতার জবাব দিয়ে সাধারণ মুমিন মুসলমানদের ঈমান এবং আমলকে হেফাজত করেন।
পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষদের দ্বীন-ধর্ম বুঝার ও পালনের সুবিধার্থে তাদের নিজ ভাষায় “পেরাচীন কাল” নামে কিতাব রচনা করেন।
এ মহান মনীষী ময়দানেও ছিলেন এক বীর সিপাহসালার। হিন্দু পণ্ডিতদের মোনাজারায় নাস্তানাবুদ করেছেন বহুবার। তৎকালীন সময়ে বাতিল ফেরকাদের উপদ্রবও ছিল অনেক। রাসুলের শান মানে আঘাত করা, নবুয়তের দাবি করা, হিন্দু মুসলিম ভাই ভাই বলে সুলেহ কুল্লি করা সহ নানা ফেতনার ছড়াছড়ি ছিল চারদিকে। এ মহান সিপাহসালার মাঠে ময়দানে বক্তৃতা, মোনাজারা ও লেখনীর মাধ্যমে এগুলোর জবাব দেন কঠোর হস্তে।
মুসলমানদের রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত সচেতন। দ্বিজাতিতত্ত্বের যেই বীজ বপন করে গিয়েছিলেন ইমাম আলা হযরত, সেই তত্ত্বের প্রচার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তারই যোগ্য সাগরীদ সৈয়দ নইমুদ্দিন মুরাদাবাদী। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর,সেই রাষ্ট্রের সংবিধান লেখার দায়িত্ব অর্পিত হয় মুফাসসিরে মোরাদাবাদ এর উপর। একে একে ১১ টি আইন লিখে শেষ করলেও, সমাপ্ত করতে পারেননি। আল্লাহর ডাকে সারা দিয়ে যাত্রা করেন অনন্তকালের দিকে।
তাঁর উত্তরসূরী হওয়ার দাবীদার হিসেবে আমরা তাঁর সম্পর্কে কতটুকু জানি! আল্লাহ তায়ালা তাঁর যোগ্য উত্তরসূরী হতে আমাদের তৌফিক দিন। আমীন।
এ মহান মনীষির বীরত্বগাঁথা জীবনের ঝলক পেতে “মুফাসসির-এ মুরাদাবাদ” হতে পারে আপনার জন্য শ্রেষ্ঠ উপহার।
অসংখ্য মোবারকবাদ “শেখ ফরিদ উদ্দিন” ভাইকে এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে লেখনীর জন্য। আকাবীর সিরিজের অন্যান্য বইগুলার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষমান।