জ্ঞানার্জনে-শিক্ষকের-আবশ্যকতা

জ্ঞানার্জনে শিক্ষকের আবশ্যকতা

হযরত আল্লামা শেখ আব্দুল হক দেহলভী (র.) স্বরচিত “তাকমীলুল ঈমান” নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেন যে,

دراصل علم کے حاصل کرنے کا واحد ذریعہ تو استاد ھی ہے ۔ مطالب زیادہ سے زیادہ حاصل کرنا تو اپنے فہم و استنباط کا نتیجہ ہوتے ہیں حدیث پاک میں اس نکتے کو یوں واضح کیا ہے

অথার্ৎ “জ্ঞান অর্জনের একমাত্র রাস্তা হলো উস্তাদের সাহচর্য, উদ্দেশ্য এবং ব্যাখ্যা তো নিজের পক্ষ থেকে চিন্তা ভাবনা করে করা যায়। হাদীস পাকের মধ্যে এই ভেদকে এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে— 

انَّمَا الْعِلْمُ بِالتَّعَلُّمِ وَالْحِلْمُ بِالتَّحَلُّمِ

অর্থাৎ নিশ্চয়ই এলেম অর্জিত হয় শিক্ষার দ্বারা আর অভিজ্ঞতা হাছিল হয় ধৈর্যের দ্বারা।”

ইমাম আবু হাইয়্যান উন্দুলুসী (র.) বলেন-

اِذَا رُمْتَ الْعُلُوْمَ بِغَيْرِ شَيْخٍ  ــ  ضَلَلْتَ عَنِ الصِّرَاطِ الْمُسْتَقِيْمِ

অর্থাৎ “যদি তুমি উস্তাদ ব্যতীত ইলিম অর্জন করো, তবে তুমি সরল সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়বে।”

“কাইফিয়্যাতু ফি উলুমির রেওয়াত” গ্রন্থে উল্লিখিত আছে-

قَالَ اِبْنُ جَابِرٍ: لَا يُؤْخَذُ الْعِلْمُ اِلَّا مِمَّنْ شُهِدَ لَهٗ بِالطَّلَبِ

অর্থাৎ “ইমাম ইবনে জাবির (র.) বলেন— উস্তাদের নিকট উপস্থিত হওয়া ছাড়া ইলিম শিক্ষালাভ করা যায় না।”

তাই যুগ যুগ ধরে পৃথিবীতে যত বড় বড় মনীষী, দার্শনিক ও মহাপুরুষের আবির্ভাব ঘটেছে তাদের প্রত্যেককেই কোন না কোন শিক্ষকের নিকট জ্ঞান অর্জন করতে হয়েছে। কারণ শিক্ষক ব্যতীত জ্ঞানার্জন অসম্ভব ।

ইলমে তাজবীদ (কুরআন পাঠের নিয়ম কানুন), ইলমে তাছাউফ সহ অনেক বিষয় এমন ও রয়েছে যে, শিক্ষক ব্যতীত একটি অক্ষরও বুঝা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। অবশ্য গণিতের সূত্র গুলি শিক্ষা দেওয়ার পর যেমনিভাবে ছাত্রদেরকে অঙ্ক কষে দিতে হয় না, বরং তারা নিজে নিজেই অঙ্ক কষতে পারে, তদ্রূপ যে কোন বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষালাভ করার পর বিভিন্ন বই পুস্তক কিতাবাদি পাঠ করে জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি করা সম্ভব ও সহজ। এ ছাড়াও আউলিয়ায়ে কেরামের ইলহাম, ইলমে লাদুনী তো অনস্বীকার্য।

বড়পীর দস্তেগীর হযরত গাউছুল আজম শেখ সৈয়দ আব্দুল কাদের জিলানী (রা.) যিনি মাতৃগর্ভে পবিত্র কোরআনের প্রথম ১৮ পারা এবং হযরত খাজা কুতুব উদ্দীন বখতিয়ার কাকী (র.) পবিত্র কোরআনের ১৫ পারা হিফজ (মুখস্থ) করেই পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তাদেরকেও অনেক উস্তাদ ও পীর মাশয়েখের নিকট শিক্ষা লাভ করতে হয়েছে।

মূল কথা হলো, আম্বিয়ায়ে কেরাম ব্যতীত সবাই শিক্ষকের মুখাপেক্ষী। একমাত্র নবী রাসুলগণ কে ওহীর মাধ্যমে সরাসরি আল্লাহ পাক শিক্ষা দিয়েছেন । তাঁরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো মুখাপেক্ষী নন । সুতরাং শিক্ষার জন্য শিক্ষক অপরিহার্য। শিক্ষক হলেন মানুষ গড়ার কারিগর।

সূত্র:

ইসলামের দৃষ্টিতে শিক্ষকের মর্যাদা (হতে পরিমার্জিত)

কৃত: আল্লামা শেখ জুবাইর আহমদ রহমতাবাদী, সহকারী অধ্যাপক, সিরাজনগর ফাজিল মাদ্রাসা,শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top